গুয়ান্তানামো। অন্ধকারের রাজ্য। নানান পদের টর্চার, অবিরাম অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ, ঘুটঘুটে অন্ধকার নির্জন সেল, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নিঃসঙ্গতা এবং…

বিশ্বজুড়ে শান্তি, প্রগতি আর গণতন্ত্র ফেরি করে বেড়ানো আমেরিকার মুখোশ খসে পড়ে যেখানটায়, গুয়ান্তানামো হলো সেই জায়গা। ৯/১১ এর পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক অন্তহীন যুদ্ধের সূচনা করে বিশ্বের নিয়ন্ত্রক হয়ে বসা দেশটি। তাঁবেদার রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ানক নির্যাতন করে অসংখ্য মানুষকে। বিচার ছাড়া বছরের পর বছর নির্যাতন সয়ে যেতে বাধ্য হয় অসংখ্য নিরপরাধ ও সম্ভ্রান্ত মানুষ। ঠিক তেমনই একজন ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক মোয়াজ্জাম বেগ। একজন সজ্জন, আন্তরিক মুসলিম। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বসনিয়া আর আফগানিস্তানে সামাজিক কাজ করেছেন সম্পূর্ণ নিজের গরজে। ২০০১ এর অক্টোবরে কাবুলের উপর মার্কিন বোমারু বিমানের কার্পেট বোম্বিং থেকে বাঁচতে পরিবার পরিজন নিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। সেখান থেকে নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে গভীর রাতে ঘুমন্ত পরিবারের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সহযোগিতা করে পাকিস্তানি গোয়েন্দারা। তারপর শুরু হয় এক বিভীষিকাময় যাত্রার। ইসলামাবাদ, কান্দাহার হয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাগরাম কারাগারে, যেখানে বন্দী ছিলেন আফিয়া সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে। তারপর সেখান থেকে তাঁর দুঃস্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় গুয়ান্তানামোতে, আমেরিকান সভ্যতার পচাগলা চেহারাটা যেখানে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় মোয়াজ্জামের।

“এনিমি কমব্যাট্যান্ট” বা এর অফিসিয়াল বঙ্গানুবাদ “শত্রু যোদ্ধা” তাঁর সেই অভিজ্ঞতারই গ্রন্থরূপ। বইটিতে শুধু গুয়ান্তানামোই নয়, সাথে উঠে এসেছে তাঁর ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠা, এক পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নিজেকে আবিষ্কার করা আর তারপর ভাগ্যের ফেরে সেই পরিস্থিতিরই একজন ভিক্টিম হয়ে যাওয়া—এই সবকিছুই উঠে এসেছে দুই মলাটের ভেতরে। তাই শুধু গুয়ান্তানামোর নিখুঁত বিবরণীই নয়, সেইসাথে বিশেষ ওই সময়ের অন্যান্য ঘটনাপ্রবাহেরও নির্ভরযোগ্য এক দলিল হয়ে উঠেছে বইটি।

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “শত্রু যোদ্ধা”

Your email address will not be published. Required fields are marked *