Look Inside

আয়না | কাশ্মীরের স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি

আফজাল গুরু ভারতে দূর্নীতি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে ছিলেন। ২০০১ সালে ভারতের সংসদে একটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আর সেই হামলার ঘটনায় আফজাল গুরুকে প্রধান আসামী করা হয়!

তিহার কারাগারের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, আফজাল গুরু সব সময় উৎফুল্ল ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তিহার কারাগারের প্রতিটা কারারক্ষীর নাম আফজাল গুরুর মুখস্ত ছিল! তিনি ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে যাবার সময়, প্রতিটা কারারক্ষীর নাম ডেকে ডেকে কুশল জিজ্ঞেস করেন এবং আলবিদা জানান।

সেই কর্মকর্তা জানান, সেই দিন অধিকাংশ কারারক্ষীরাই নিজেদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি ! তিহার কারাগারের সেই কর্মকর্তা জানান, আফজাল গুরুর ফাঁসিসহ এই কারাগারে সর্বমোট ২৫টি ফাঁসি কার্যকর করা হয়।তার মধ্যে ১০ টি ফাঁসিতে উপস্থিত থাকার সুযোগ হয়েছিল। “ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনলেই মানুষ ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। কিন্তু হাসি মুখে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার যে রূপকথা প্রচলিত রয়েছে, আফজাল গুরুর বেলায় ঠিক তাই-ই ঘটেছে”।

ফাঁসির আগে আফজাল গুরু তাঁর পরিবারের উদ্দেশ্য ছোট্ট একটি চিঠি লিখে গিয়েছেন এবং একটি ডায়েরি লিখে গিয়েছেন গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্য ।

পরিবারের প্রতি লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, “আমাকে এই অবস্থানে উন্নীত করার জন্য আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি শতকোটি শুকরিয়া জানাই। সকল বিশ্বাসীকেও আমার অভিনন্দন জানাই। কারন, আমরা সবাই একসঙ্গে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আমাদের শেষটাও হতে হবে সত্য ও ন্যায়ের পথে। আমার পরিবারের প্রতি অনুরোধ, আমার মৃত্যুতে শোকার্ত না হয়ে, তাদের উচিত হবে আমি যে অবস্থান অর্জন করেছি, তাকে শ্রদ্ধা করা। আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের সবচেয়ে বড় রক্ষাকর্তা ও সাহায্যদাতা। আল্লাহ হাফেজ”।”

ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টে আক্রমণ ছিল ইন্ডিয়ার কলিজায় আঘাত করার নামান্তর। যে আঘাতের ক্ষত তারা কোনোভাবেই মুছতে পারছিল না। এই ক্ষত ভুলার জন্য তারা যে কৌশলই অবলম্বন করছিলো তা তাদের জন্যই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো।

আফজাল গুরু যেন ভারতের এসব কৌশল অনুধাবন করেছিলেন। আল্লাহর দয়ায় তিনি তার উন্নত চিন্তা ভাবনা সমূহ একটি গ্রন্থনায় একত্রিত করে উম্মাহর সামনে সংরক্ষিত ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়ার পূর্বে তিনি তার ঈমানী চেতনাবোধ – বিপ্লবী, সংগ্রামী ও মুক্তিকামী মানসিকতার একটি আয়নায় একত্রিত করে রেখে গিয়েছেন। তার একনিষ্ঠ মানসিকতা তার শাহাদাতের আলোয় এতটাই উদ্ভাসিত হয়েছিল যার ফলে ভারতের যাবতীয় অপকৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

ভারতের তিহার কারাগারে বসে লিখা আফজাল গুরুর সেই ডায়েরির নাম ছিলো “আয়না”।